বয়স্ক ভাতা অনলাইন আবেদন করার সঠিক নিয়ম 2025

বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিচালিত বয়স্ক ভাতা কর্মসূচি বয়স্ক নাগরিকদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। এ ভাতা পেতে এখন সহজেই অনলাইনে আবেদন করা যায়। চলুন জেনে নিই বয়স্ক ভাতা অনলাইন আবেদনের প্রক্রিয়া

বয়স্ক ভাতা অনলাইন আবেদন করার সঠিক নিয়ম


বয়স্ক ভাতা অনলাইনে আবেদনের জন্য যোগ্যতা

১. বয়সের সীমা:

  • পুরুষদের ক্ষেত্রে ৬৫ বছর বা তার বেশি।

  • মহিলাদের ক্ষেত্রে ৬২ বছর বা তার বেশি।

২. অগ্রাধিকার:

  • দরিদ্র পরিবারে বসবাসরত বয়স্ক ব্যক্তি।

  • ভূমিহীন ও কর্মক্ষম নয় এমন ব্যক্তি।

  • প্রতিবন্ধী বা অসহায় বয়স্ক নাগরিক।

৩. জাতীয় পরিচয়পত্র: আবেদনকারীর অবশ্যই বৈধ এনআইডি (জাতীয় পরিচয়পত্র) থাকতে হবে।

অনলাইনে আবেদন করার ধাপসমূহ

১. ওয়েবসাইট ভিজিট করুন:
সরকারের সমাজসেবা অধিদপ্তরের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট http://www.dss.gov.bd এ যান।

২. রেজিস্ট্রেশন করুন:

  • নতুন ব্যবহারকারী হলে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করুন।

  • মোবাইল নম্বর ও এনআইডি নম্বর প্রদান করে প্রোফাইল তৈরি করুন।

  1. আবেদন ফর্ম পূরণ করুন:

    • আবেদনকারীর ব্যক্তিগত তথ্য, এনআইডি নম্বর, ঠিকানা এবং আর্থিক অবস্থা সংক্রান্ত তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করুন।

    • প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস (যেমন: ছবি, এনআইডির কপি) আপলোড করুন।

৪. তথ্য যাচাই করুন:

  • আবেদন ফর্ম জমা দেওয়ার আগে সকল তথ্য পুনরায় যাচাই করুন।

  • ভুল তথ্য প্রদান করলে আবেদন বাতিল হতে পারে।

৫. আবেদন জমা দিন:

  • সকল তথ্য পূরণ ও যাচাই করার পর আবেদন জমা দিন।

  • সফলভাবে জমা দেওয়ার পর একটি ট্র্যাকিং নম্বর পাবেন, যা দিয়ে আপনার আবেদন স্ট্যাটাস ট্র্যাক করতে পারবেন।


আবেদন প্রক্রিয়ার পরবর্তী ধাপ

  • আবেদন জমা দেওয়ার পর স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভার মাধ্যমে তথ্য যাচাই করা হয়।

  • যাচাই শেষে প্রার্থী নির্বাচিত হলে তার মোবাইল নম্বরে বা প্রদত্ত ঠিকানায় ভাতার তথ্য জানিয়ে দেওয়া হবে।


গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা

  • বিনা খরচে আবেদন করুন: বয়স্ক ভাতা আবেদন সম্পূর্ণ বিনামূল্যে করা যায়। কোনো এজেন্ট বা দালালের কাছে টাকা দিবেন না।

  • তথ্য সঠিক রাখুন: আপনার দেওয়া তথ্য ভুল হলে আবেদন বাতিল হতে পারে।

বয়স্ক ভাতা তালিকা: কীভাবে অনলাইনে চেক করবেন


বাংলাদেশে বয়স্ক ভাতা কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগীদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়। এই তালিকায় থাকা ব্যক্তিরা মাসিক ভাতা পান। আপনি যদি জানতে চান যে আপনার নাম বা আপনার পরিচিত কারো নাম এই তালিকায় আছে কি না, তবে অনলাইনে এটি সহজেই চেক করা যায়। নিচে বয়স্ক ভাতা তালিকা চেক করার প্রক্রিয়া তুলে ধরা হলো।


বয়স্ক ভাতা তালিকা চেক করার ধাপসমূহ

১. সমাজসেবা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে যান:

  • http://www.dss.gov.bd লিঙ্কে ক্লিক করুন। এটি সমাজসেবা অধিদপ্তরের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট।

২. উপকারভোগীর তালিকা সেকশন খুঁজুন:

  • ওয়েবসাইটে গিয়ে "উপকারভোগীর তালিকা" বা "বয়স্ক ভাতা তালিকা" অপশন খুঁজুন।

  • নির্দিষ্ট অঞ্চলের (জেলা/উপজেলা/ইউনিয়ন) তালিকা দেখতে প্রয়োজনীয় ফিল্ড পূরণ করুন।

৩. জেলা, উপজেলা, ও ইউনিয়ন নির্বাচন করুন:

  • আপনার এলাকা নির্বাচন করার জন্য জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়নের নাম সিলেক্ট করুন।

  • এরপর "সার্চ" বা "তালিকা দেখুন" বাটনে ক্লিক করুন।

৪. তালিকা ডাউনলোড করুন:

  • অনলাইনে তালিকা দেখার পাশাপাশি এটি ডাউনলোড করার অপশনও পাবেন।

  • ডাউনলোড করা তালিকাটি খুলে আপনার নাম খুঁজে নিন।


প্রয়োজনীয় তথ্য

তালিকা দেখতে বা চেক করতে হলে নিচের তথ্যগুলো আপনার জানা থাকতে হবে:

  • জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর (NID)।

  • আপনার এলাকার সঠিক নাম (জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন)।

  • আবেদন জমা দেওয়ার সঠিক তারিখ বা সময়।


স্থানীয় অফিস থেকে তালিকা সংগ্রহ

আপনার যদি অনলাইনে তালিকা চেক করা সম্ভব না হয়, তবে:

  • স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ অফিস বা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে তালিকা চেক করতে পারেন।

  • আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সঙ্গে নিয়ে যান।


তালিকায় নাম না থাকলে কী করবেন?

  • আবেদন প্রক্রিয়া সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে কি না যাচাই করুন।

  • স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ বা সমাজসেবা অফিসে যোগাযোগ করুন।

  • পুনরায় আবেদন করার জন্য প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা নিন।


বয়স্ক ভাতা তালিকা চেক করা খুবই সহজ। অনলাইনের সুবিধা কাজে লাগিয়ে আপনি বাড়িতে বসেই এটি করতে পারেন। যদি কোনো সমস্যায় পড়েন, তাহলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাহায্য নিন।

বয়স্ক ভাতা আবেদনের শেষ তারিখ

বাংলাদেশে বয়স্ক ভাতার জন্য আবেদন সাধারণত প্রতি বছর নির্দিষ্ট সময়ে গ্রহণ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৩ সালে অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া ১০ আগস্ট থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চালু ছিল।

বর্তমানে, ২০২৫ সালের বয়স্ক ভাতা আবেদনের নির্দিষ্ট সময়সূচী সম্পর্কে অফিসিয়াল কোনো ঘোষণা পাওয়া যায়নি। সাধারণত, আবেদন গ্রহণের সময়সূচী সমাজসেবা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়। সর্বশেষ তথ্যের জন্য, আপনি সমাজসেবা অধিদপ্তরের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট http://www.dss.gov.bd পরিদর্শন করতে পারেন।

এছাড়াও, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ বা সমাজসেবা অফিসের সাথে যোগাযোগ করে আবেদনের সময়সূচী সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। আবেদনের সময়সূচী প্রকাশিত হলে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আবেদন জমা দেওয়া নিশ্চিত করুন।

বয়স্ক ভাতা আবেদন যাচাই

বয়স্ক ভাতার জন্য আবেদন করার পর তা যাচাই করার প্রক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকার কর্তৃক গৃহীত এই যাচাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয় যে প্রকৃত উপকারভোগীরা এই সুবিধা পান। সাধারণত আবেদন যাচাই করতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা বা সমাজসেবা অফিস থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। আবেদন যাচাইয়ের জন্য আবেদনকারীর প্রদত্ত তথ্য, যেমন জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর (NID), ঠিকানা, আর্থিক অবস্থা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট খতিয়ে দেখা হয়।

তথ্য যাচাইয়ের পর সমাজসেবা অফিস বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষ তালিকা চূড়ান্ত করে। যাচাই প্রক্রিয়ার সময় আবেদনকারীর কাছে কোনো অতিরিক্ত তথ্য প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট অফিস থেকে যোগাযোগ করা হয়। তাই আবেদনকারীদের তাদের মোবাইল নম্বর ও ঠিকানা সঠিকভাবে প্রদান করা উচিত। যাচাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে, নির্বাচিত প্রার্থীদের নাম বয়স্ক ভাতার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং তাদের মোবাইল নম্বরে অথবা স্থানীয় অফিসের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়।

যাচাই প্রক্রিয়ার গতি নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট এলাকার কর্মচারী ও স্থানীয় প্রশাসনের ওপর। যদি আপনার আবেদন যাচাইয়ের ক্ষেত্রে বিলম্ব হয়, তাহলে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ বা সমাজসেবা অফিসে যোগাযোগ করে স্ট্যাটাস জানতে পারবেন। আবেদন যাচাইয়ের তথ্য সঠিকভাবে প্রদান করলে প্রক্রিয়াটি আরও সহজ হয় এবং প্রকৃত সুবিধাভোগীরা সময়মতো ভাতা পেতে পারেন।

বয়স্ক ভাতা কত টাকা 

বাংলাদেশ সরকারের বয়স্ক ভাতা কর্মসূচির আওতায় বর্তমানে প্রতিমাসে একজন সুবিধাভোগী ৫০০ টাকা করে পান। এই ভাতা সরাসরি সুবিধাভোগীর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা মোবাইল ব্যাংকিং (যেমন বিকাশ বা নগদ) এর মাধ্যমে প্রদান করা হয়।

সরকার প্রতিনিয়ত দরিদ্র ও বয়স্ক জনগোষ্ঠীর কল্যাণে এই কর্মসূচি সম্প্রসারণ ও বাজেট বৃদ্ধি করছে। তবে ভাতার পরিমাণ এবং প্রাপ্তি প্রক্রিয়া স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়, এবং সময়ে সময়ে এর নিয়মাবলী ও পরিমাণ পরিবর্তন হতে পারে।

আপনার এলাকার সমাজসেবা অফিস বা ইউনিয়ন পরিষদে যোগাযোগ করে সর্বশেষ তথ্য নিশ্চিত করা যেতে পারে।

বয়স্ক ভাতা কার্ড চেক করার পদ্ধতি

বয়স্ক ভাতা কার্ড একজন সুবিধাভোগীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি নথি, যা তাকে মাসিক ভাতা প্রাপ্তির যোগ্যতা নিশ্চিত করে। যদি আপনি নিশ্চিত হতে চান যে আপনার বা আপনার পরিচিত কারো বয়স্ক ভাতা কার্ড তৈরি হয়েছে কি না, তবে তা সহজেই অনলাইনে বা স্থানীয় অফিসের মাধ্যমে চেক করা যায়। নিচে বয়স্ক ভাতা কার্ড চেক করার ধাপগুলো উল্লেখ করা হলো:


অনলাইনে বয়স্ক ভাতা কার্ড চেক করার প্রক্রিয়া

১. ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন:
সমাজসেবা অধিদপ্তরের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট http://www.dss.gov.bd এ যান।

২. উপকারভোগীর তালিকা সেকশন খুঁজুন:

  • ওয়েবসাইটে "উপকারভোগীর তালিকা" বা "বয়স্ক ভাতা কার্ড চেক" অপশনটি নির্বাচন করুন।

৩. প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করুন:

  • আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর (NID)।

  • আপনার জেলা, উপজেলা, ও ইউনিয়ন নির্বাচন করুন।

৪. তথ্য যাচাই করুন:

  • সঠিক তথ্য প্রদান করার পর তালিকা থেকে আপনার নাম ও কার্ডের স্ট্যাটাস দেখতে পাবেন।


স্থানীয় অফিসের মাধ্যমে বয়স্ক ভাতা কার্ড চেক

আপনি যদি অনলাইনে চেক করতে না পারেন, তবে নিকটস্থ ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, বা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে আপনার বয়স্ক ভাতা কার্ডের স্ট্যাটাস জানতে পারবেন। সেখানে জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় নথি নিয়ে যান।


গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা

  • বয়স্ক ভাতা কার্ড হারিয়ে গেলে, স্থানীয় অফিসে গিয়ে পুনরায় কার্ড ইস্যু করার আবেদন করতে হবে।

  • ভাতা কার্ড সংক্রান্ত যেকোনো জালিয়াতি বা সমস্যার জন্য সংশ্লিষ্ট অফিসে অভিযোগ জানানো যেতে পারে।

বয়স্ক ভাতা কার্ড চেক করার মাধ্যমে আপনি নিশ্চিত হতে পারেন যে আপনার নাম সুবিধাভোগীর তালিকায় রয়েছে এবং ভাতার অর্থ সঠিকভাবে পাচ্ছেন।


বয়স্ক ভাতা চালু হয় কত সালে

বাংলাদেশে বয়স্ক ভাতা কর্মসূচি চালু হয় ১৯৯৮ সালে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার দেশের দরিদ্র ও প্রবীণ জনগোষ্ঠীর জন্য এই সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি চালু করেন। এটি ছিল দেশের প্রথম কোনো সরকারিভাবে পরিচালিত সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম, যার উদ্দেশ্য ছিল প্রবীণ জনগণের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা।

শুরুর দিকে বয়স্ক ভাতা কর্মসূচি সীমিত সংখ্যক সুবিধাভোগীকে অন্তর্ভুক্ত করলেও বর্তমানে এটি দেশের একটি বৃহৎ সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমে পরিণত হয়েছে। বছরের পর বছর এই কর্মসূচির বাজেট বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং আরো বেশি সুবিধাভোগীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটি এখন বাংলাদেশের দরিদ্র প্রবীণ নাগরিকদের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সহায়তা।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ট্রিক আলয়ের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url